কেন ভয় করিব, আমি কি গীতা পড়ি নাই? 🇮🇳🔥

Temple Organization মন্দির সংস্থা
0

কেন ভয় করিব, আমি কি গীতা পড়ি নাই? 🇮🇳🔥

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের এক অগ্নিশিশু, ক্ষুদিরাম বসু ছিলেন এক নির্ভীক ক্ষণজন্মা বিপ্লবী। তিনি ১৮৮৯ সালের ৩রা ডিসেম্বর, তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির মেদিনীপুর জেলার কেশপুর থানার মোহবনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

তার পিতা ত্রৈলক্যনাথ বসু ছিলেন নাড়াজোল শহরের আয় এজেন্ট এবং মায়ের নাম লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী। তিন কন্যার পর ক্ষুদিরাম ছিলেন মায়ের চতুর্থ সন্তান। আগের দুই পুত্র শিশু বয়সে মৃত্যুবরণ করায়, সামাজিক রীতি অনুযায়ী ক্ষুদিরামকে তার বড় বোনের কাছে বড় হতে দেওয়া হয়। ছোটবেলাতেই তিনি মাতাপিতা হারান এবং বড় বোনের কাছে লালিত-পালিত হন।

বিপ্লবী পথচলায় যাত্রা

কেবল মাত্র ১৫–১৬ বছর বয়সে ক্ষুদিরাম বিপ্লবী আন্দোলনের অংশ হন। তিনি যুক্ত হন Anushilan Samiti-র সাথে। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক তরুণদের মধ্যে একটি সক্রিয় আন্দোলন শুরু হয়। ক্ষুদিরাম ছিলেন তার অন্যতম। তিনি বোমা তৈরি, বন্দুক চালানো ও গোপন কর্মকাণ্ডে পারদর্শী হয়ে ওঠেন।

বৃহৎ দায়িত্ব ও বিপর্যয়

১৯০৮ সালে যুগান্তর বিপ্লবীদল ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকীকে দায়িত্ব দেন ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট ডগলাস কিংসফোর্ডকে হত্যা করার। ৩০ এপ্রিল ১৯০৮–এ তারা গোপনে বোমা হামলা চালান। দুর্ভাগ্যবশত, তারা ভুল গাড়িতে বোমা নিক্ষেপ করেন। এতে এক ইংরেজ মহিলা ও তার কন্যা নিহত হন। ক্ষুদিরাম সমস্ত দায় নিজের ওপর নেন এবং কোনো সহযোগীর নাম প্রকাশ করতে অস্বীকার করেন।

ফাঁসি ও নীরব সাহস

মুজাফ্ফরপুর কারাগারে বিচার হয়ে, ১১ আগস্ট ১৯০৮–এ ক্ষুদিরাম বসুকে ফাঁসির মঞ্চে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তখন তার বয়স মাত্র ১৮ বছর ৮ মাস।

ফাঁসির আগে সতীশচন্দ্র চক্রবর্ত্তী তাকে প্রশ্ন করেন, "তোমার মনে কোন ভয় হয় কি?" উত্তরে ক্ষুদিরাম বসু হাসিমুখে বলেন: "কেন ভয় করিব? আমি কি গীতা পড়ি নাই?" 🙏 তিনি ছিলেন গীতার আত্মতত্ত্বে অবিচল বিশ্বাসী—জানতেন আত্মা অবিনাশী, তাকে ধ্বংস করা যায় না।

"মানুষ যেমন জীর্ণ বস্ত্র পরিত্যাগ করে নূতন বস্ত্র পরিধান করে, তেমনি আত্মাও জীর্ণ শরীর ত্যাগ করে নতুন শরীর গ্রহণ করে। আত্মাকে শস্ত্রের দ্বারা ছেদন করা যায় না, অগ্নিতে দগ্ধ করা যায় না, জলে ভেজানো যায় না এবং বায়ু তাকে শুষ্ক করতে পারে না।" — শ্রীমদ্ভগবদগীতা ২.২২-২৩

শেষ ইচ্ছা ও দেশপ্রেম

ফাঁসির আগে ক্ষুদিরাম বাবুকে বলেন, রাজপুত নারীদের মতো তিনি আগুনে ঝাঁপ দিয়ে জীবন দিতে চান। তার শেষ ইচ্ছা ছিল দিদিকে দেখা। কিন্তু ব্রিটিশরা তা পূরণ করতে দেননি। তার আত্মত্যাগ পুরো বাংলায় বিপ্লবের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দেয়।

বাকুড়ার পীতাম্বর দাস লিখেছিলেন এক অমর বিপ্লবী সংগীত:

"একবার বিদায় দে-মা ঘুরে আসি, হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে জগৎবাসী। কলের বোমা তৈরি করে দাঁড়িয়ে ছিলেম রাস্তার ধারে মাগো, বড়লাটকে মারতে গিয়ে মারলাম আরেক ইংল্যান্ডবাসী। শনিবার বেলা দশটার পরে জজকোর্টেতে লোক না ধরে, মাগো হল অভিরামের দ্বীপ চালান মা ক্ষুদিরামের ফাঁসি। দশ মাস দশদিন পরে জন্ম নেব মাসির ঘরে, মাগো তখন যদি না চিনতে পারিস দেখবি গলায় ফাঁসি।।"

উত্তরসূরি প্রভাব

ক্ষুদিরাম বসুর বীরত্ব ও আত্মত্যাগ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অমর প্রতীক। তার সাহস ও দেশপ্রেম যুব সমাজকে অনুপ্রাণিত করেছে। আজও তার স্মৃতিতে প্রতি বছর শ্রদ্ধা জানানো হয়। ক্ষুদিরামের জীবন আমাদের শেখায়, জীবনকে বাঁচানো বা ভয় পাওয়া নয়—দেশপ্রেম, সাহস এবং আত্মত্যাগেই চিরস্থায়ী পরিচয়।

“জীবনে যারা বাঁচা-মরাকে তোয়াক্কা না করে এগিয়ে যায়, তাঁরা অনন্তকাল মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকে।”


লেখক: বাড়ালি মুজিব

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
3/related/default