🌸 আমলক্ষী একাদশী: পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা, পূজা, উপবাস, সামাজিক গুরুত্ব ও মন্ত্র 🌸
আমলক্ষী একাদশী হিন্দু ধর্মের একটি পবিত্র ও পুণ্যময় তিথি। এই দিনে ভগবান বিষ্ণু ও দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করলে পাপ মোচন, সংসারিক শান্তি, সৌভাগ্য ও আর্থিক সমৃদ্ধি লাভ হয়। শাস্ত্রে বলা হয়েছে, একাদশীর পূজা ও উপবাস সারা জীবনের দুঃখ দূর করে।
📅 কখন হয়:
- ফাল্গুন মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিতে
- সাধারণত ফেব্রুয়ারি–মার্চ মাসে
- পরের দিন অনুষ্ঠিত হয় হোলিকা দহন
⏰ একাদশীর সময়কাল:
- শুরু: সকাল ৬:০০–৭:০০ ঘটিকা
- শেষ: পরবর্তী দিনের সকাল ৬:০০–৭:০০ ঘটিকা
- উপবাসের সময়: সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত, বিশেষত একাদশীর মূল সময়ের মধ্যে পালন উত্তম
🕉️ নামের অর্থ ও মাহাত্ম্য
“আমলক্ষী” = অমল (পবিত্র, নিখুঁত, পাপমুক্ত) + লক্ষী (দেবী লক্ষ্মী)। শাস্ত্র অনুযায়ী, পূজা করলে সংসারিক শান্তি, আর্থিক উন্নতি, সৌভাগ্য বৃদ্ধি এবং ভগবানের করুণা লাভ হয়।
🌼 কিভাবে পালন করবেন:
১. স্নান ও শুদ্ধি:- ভোরে পবিত্র জলে স্নান
- পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান
- ঘর ও পূজাস্থান পরিষ্কার করা
- সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাস
- নির্জলা বা ফলাহার করা যায়
- খাওয়া যাবে: ফল, দুধ, বাদাম, সাবুদানা, নারকেল পানি, পঞ্চামৃত
- নিষিদ্ধ: চাল, ডাল, মাছ, মাংস, পেঁয়াজ-রসুন
পূজার জন্য যা লাগে:
- তুলসী পাতা 🌿
- ধূপ, প্রদীপ 🕯️
- ফুল 🌺
- অক্ষত ও জল 💧
- ফল 🍌
- মিষ্টান্ন বা ভোগ
পূজার ধাপ:
- ভগবান বিষ্ণু ও লক্ষ্মী দেবীর ধ্যান 🕉️
- ধূপ ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন
- অর্ঘ্য, ফল, জল ও নৈবেদ্য নিবেদন
- শ্রী বিষ্ণুস্তব বা বিষ্ণুস্তব পাঠ
- সন্ধ্যায় পুনরায় আরতি ও ধূপ
🕉️ মন্ত্র জপ (বাংলায়)
- শ্রী বিষ্ণু মন্ত্র: "ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়"
- দেবী লক্ষ্মী মন্ত্র: "ওঁ শ্রীং মহালক্ষ্ম্যাই নমঃ"
- ভগবান নারায়ণ মন্ত্র: "ওঁ নারায়ণায় নমঃ"
- আমলক্ষী একাদশীর বিশেষ কীর্তন: "ওঁ অমলক্ষ্যাই নমঃ"
💡 প্রতিটি মন্ত্র ১০৮ বার জপ করা উত্তম
🍊 খাবারের নিয়ম
- ✔ খাওয়া যায়: ফল 🍎🍌, দুধ 🥛, বাদাম 🥜, খেজুর 🌴, নারকেল পানি 🥥, সাবুদানা, কলা 🍌
- ❌ এড়িয়ে চলুন: চাল, ডাল, লবণযুক্ত খাবার, মাছ ও মাংস 🐟🥩, পেঁয়াজ-রসুন, অন্নজাত খাবার
রাতে একবেলা ফলাহার বা নির্জলা উপবাস উত্তম
🤝 সামাজিক ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ড
- দান: ব্রাহ্মণ, দরিদ্র ও অসহায়দের খাদ্যদান 🍛; ফল, দুধ বা অর্থ দান করে পুণ্য অর্জন
- সামাজিক ঐক্য: একাদশীতে সবাই একত্রিত হয়ে পূজা করলে সামাজিক বন্ধন শক্তিশালী হয়
- পুণ্য কার্য: মন্দিরে প্রসাদ বিতরণ, তীর্থস্নান বা গঙ্গা নদীতে স্নান, ধ্যান ও যোগ প্র্যাকটিস
💫 একাদশী ভঙ্গ (পরবর্তী দিন)
- দ্বাদশীর সূর্যোদয়ের পর উপবাস ভঙ্গ করুন
- ব্রাহ্মণ বা দরিদ্রদের খাদ্যদান করুন
- এতে পুণ্য বৃদ্ধি ও দানফলের গুণ বহুগুণ বৃদ্ধি পায়
📜 শাস্ত্র অনুযায়ী ফলাফল
পুরাণে বলা হয়েছে: "যে ব্যক্তি আমলক্ষী একাদশীর পূজা ও উপবাস নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন, তার জীবনের সমস্ত দুঃখ দূর হয়। সংসারে শান্তি আসে, লক্ষ্মী দেবী অভ্যুদয় হয় এবং ভগবানের আশীর্বাদ সর্বদা তার সাথে থাকে।"
📝 উপসংহার
আমলক্ষী একাদশী শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ধর্মীয় তিথি নয়, এটি সামাজিক ও নৈতিক জীবনের শিক্ষা দেয়। পবিত্রতা ও সততা চর্চা, দান ও পরোপকার, উপবাস ও পূজা দ্বারা মানসিক প্রশান্তি ও আত্মশুদ্ধি অর্জন করা যায়। এই একাদশী পালন করলে সংসার, সম্পদ ও মানসিক শান্তি তিনই সমৃদ্ধ হয়। 🌸🙏
লেখক: রঞ্জিত বর্মন

