⭐ শাত্তিলা একাদশী: পূর্ণ গাইডলাইন, মাহাত্ম্য ও উপবাস
📅 শাত্তিলা একাদশী কখন হয়?
শাত্তিলা একাদশী প্রতি বছরের মাঘ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীতে পালিত হয়। সাধারণত এই একাদশী জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির মধ্যে পড়ে। একাদশীর পরদিন দ্বাদশী পারণ করা হয়। তাই শাত্তিলা একাদশী পালন করার জন্য শুধু মাস (মাঘ) এবং একাদশীর তারিখটি মনে রাখলেই যথেষ্ট।
🌼 শাত্তিলা একাদশী কী?
শাত্তিলা একাদশী হলো ভক্তি, উপবাস এবং দানের মাধ্যমে পুণ্য অর্জনের পবিত্র তিথি। “শাত্তিলা” শব্দের অর্থ হলো ষট্ (ছয়) + তিল। এই একাদশীর ছয়টি তিল–সেবা হলো:
- তিল দিয়ে স্নান
- তিল দিয়ে দান
- তিল দিয়ে হোম
- তিল দিয়ে অর্ঘ্য
- তিল দিয়ে আহার
- তিল দিয়ে জপ/পূজা
এই ছয়টি তিল–সেবা পালন করলে ব্যক্তি অসীম পুণ্য লাভ করেন।
📚 শাত্তিলা একাদশীর ইতিহাস
পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে—এক ধার্মিক নারী পূজা করতেন কিন্তু দান করতেন না। মৃত্যুর পর তিনি স্বর্গে গেলেও সমস্ত প্রয়োজন পূর্ণ হয়নি। দেবর্ষি নারদ ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জানালে, ভগবান নির্দেশ দেন যে শাত্তিলা একাদশীতে দান, পূজা ও তিল–সেবা করলে সমস্ত অভাব দূর হয়।
🛕 শাত্তিলা একাদশী পালনবিধি
🔰 ১. দশমী তিথির প্রস্তুতি
- হালকা, সাৎ্বিক খাবার গ্রহণ করুন
- কারও প্রতি বিদ্বেষ বা রাগ এড়িয়ে চলুন
- সকাল-বিকেল সময়ে ভগবানকে মনে করে ধ্যান করুন
🔰 ২. একাদশী তিথিতে (উপবাস দিন)
🛁 স্নান ও শুচিতা
- ভোরে ঘুম থেকে উঠুন
- তিল মিশ্রিত জলে স্নান করুন
- পরিষ্কার পোশাক পরিধান করুন
🪔 পূজা-পার্বণ
- শ্রীবিষ্ণু বা শ্রীকৃষ্ণের ছবি/মূর্তি স্থাপন করুন
- তিল, তুলসি, ফুল ও গঙ্গাজল ব্যবহার করে পূজা করুন
- প্রদীপ জ্বালিয়ে ধ্যান করুন
🔰 ৩. ছয় রকম তিল–সেবা (শাত্তিলা)
- তিল-স্নান: স্নানের জলে সামান্য তিল মেশান
- তিল দান: দরিদ্র বা ভক্তকে দান করুন
- তিল হোম: অগ্নিতে তিল অর্ঘ্য দিন (যদি সম্ভব হয়)
- তিল অর্ঘ্য: তিল মিশ্রিত জল ভগবানকে প্রদান করুন
- তিল আহার: রাতে বা পরদিন তিলের খিচুড়ি, লাড্ডু বা দুধ গ্রহণ
- তিলের জপ/পূজা: তিল ভর্তি পাত্র সামনে রেখে নামজপ করুন
🕉️ শাত্তিলা একাদশীর মন্ত্রসমূহ
- ওঁ নমো নারায়ণায়: ১০৮ বার জপ করা উত্তম
- শ্রীবিষ্ণু গায়ত্রী মন্ত্র: ওঁ নারায়ণায় বিদ্মহে বাসুদেবায় ধীমহি তন্নো বিষ্ণুঃ প্রচোদয়াত্।
- একাদশী মন্ত্র: একা দশী তিথি দেবী, বিষ্ণুপ্রিয়া জগৎগুরো দেহি মে ভক্তিমানং, অচ্যুত পদসেবনম্।
- মহা–মন্ত্র (হরে কৃষ্ণ): হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে; হরে রাম হরে রাম, রাম রাম হরে হরে।
💛 একাদশীতে করণীয় ও মনে রাখার বিষয়সমূহ
- সৎ আচরণ বজায় রাখা
- তামসিক খাবার এড়ানো
- দান ও তিলের পূজা করা
- দরিদ্র বা অসহায়কে সাহায্য করা
- গৃহ ও পরিবেশ পবিত্র রাখা
❌ একাদশীতে যা করা অনুচিত
- তামসিক খাদ্য গ্রহণ
- মিথ্যা কথা বলা বা রাগ করা
- অশুভ কাজ করা
- অশুচি পরিবেশে পূজা করা
🌕 দ্বাদশী পারণ (উপবাস ভঙ্গ)
- একাদশীর পরদিন সূর্যোদয়ের পর উপবাস ভঙ্গ করুন
- তিল-দুধ, তিল-খিচুড়ি, দধি বা ভাত গ্রহণ করতে পারেন
🌻 শাত্তিলা একাদশীর উপকারিতা
- পাপক্ষয় ও পুণ্যবৃদ্ধি
- মানসিক শান্তি ও স্থিতি বৃদ্ধি
- গৃহে শুভ শক্তির আগমন
- আর্থিক অশান্তি দূরীকরণ
- পূর্বজদের সন্তুষ্টি
- ভগবান বিষ্ণুর বিশেষ আশীর্বাদ
🙏 উপসংহার
শাত্তিলা একাদশী হলো ভক্তি, পবিত্রতা, দান এবং মানবসেবার মিলন। মাঘ মাসের একাদশীর নির্দিষ্ট তারিখে এটি পালন করলে জীবনে শান্তি, সুখ ও সমৃদ্ধি আসে। নিয়মমতো উপবাস, পূজা, দান ও তিল–সেবা করলে ভগবান শ্রীবিষ্ণুর অসীম কৃপা প্রাপ্ত হয়।

