নারীর অধিকার হিন্দু ধর্মে

Temple Organization মন্দির সংস্থা
0

📜 মনুসংহিতায় নারী অধিকার 👩‍⚖️👨‍⚖️

মনুসংহিতা সকল স্মৃতিশাস্ত্রের অগ্রগণ্য। 🌟 মনুসংহিতার প্রথম অধ্যায়ে নারী এবং পুরুষের উৎপত্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে, নারীপুরুষ একে অন্যের পরিপূরক। 🤝 একজন ছাড়া, অন্যজন অসম্পূর্ণ। 💔 সৃষ্টির প্রারম্ভে পরমেশ্বর নিজের দেহকে দ্বিধা বিভক্ত করে অৰ্দ্ধেক অংশে পুরুষ ও অর্দ্ধেক অংশে নারী সৃষ্টি করলেন। 💖

দ্বিধা কৃত্বাত্মনো দেহমৰ্দ্ধেন পুরুষোংভবৎ। অর্দ্ধেন নারী তস্যাং স বিরাজমসৃজৎ প্রভু। (মনুসংহিতা:১.৩২)

“সেই প্রভু প্রজাপতি আপনার দেহকে দ্বিধা করে অৰ্দ্ধেক অংশে পুরুষ ও অর্দ্ধেক অংশে নারী সৃষ্টি করলেন এবং তারপর সেই নারীর গর্ভে বিরাট্‌কে উৎপাদন করলেন।” ✨

মনুসংহিতার নারী-পুরুষের সাম্যাবস্থার বিষয়টি কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতাতেও পাওয়া যায়। 📖 তাঁর 'সাম্যবাদী' কাব্যগ্রন্থের বিখ্যাত 'নারী' কবিতার প্রথম স্তবকেই বলা হয়েছে :

“সাম্যের গান গাই— আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই! 🙅‍♀️🙅‍♂️ বিশ্বে যা-কিছু মহান্ সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। 🌍 বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ তাপ বেদনা অশ্রুবারি, অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী!” 💧

মনুসংহিতায় নারী প্রসঙ্গ উঠলে সবার প্রথমেই কিছু আধুনিক নারীবাদী, বামপন্থী এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বী সাম্প্রদায়িক ব্যক্তিগণ মনুসংহিতার নবম অধ্যায়ের একটি বিখ্যাত শ্লোককে (৯.৩) দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে, মহর্ষি মনু অত্যন্ত নারী বিরোধী ছিলেন। 😡 তবে ভালভাবে তলিয়ে দেখলে দেখা যায়, শ্লোকে 'রক্ষতি' শব্দের সুস্পষ্ট ব্যবহার করা হয়েছে। 🛡️ অর্থাৎ নারীকে পরাধীনতার নাগপাশে বদ্ধ নয়, তাকে সকল অবস্থাতেই রক্ষা করতে হবে। 💪

সনাতন ধর্ম নারীর সম্ভ্রম রক্ষার শিক্ষা দেয়। 🙏 দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার সম্ভ্রম রক্ষা করেছিলেন। 👑 ‘মনু’ শব্দ থেকেই মানব, মানবতা, মানুষ, মনুষ্যত্ব ইত্যাদি শব্দের উৎপত্তি। তাই মহর্ষী মনুর নির্দেশনায় শুধু নারী-পুরুষ নয়, বৈশ্বিক মানবতার কথা বলা হয়েছে। 🤝 মানবসমাজের প্রাণ হচ্ছে নারী। 💖

১️⃣ সর্বাবস্থায় নারীকে রক্ষা করতে হবে: 🛡️

পিতা রক্ষতি কৌমারে ভর্তা রক্ষতি যৌবনে। রক্ষত্তি স্থবিরে পুত্ৰা ন স্ত্রী স্বাতন্ত্র্যমহতি। (মনুসংহিতা:৯.৩)

“বিবাহের আগে কুমারী অবস্থায় স্ত্রীলােককে পিতা রক্ষা করবে, যৌবনকালে বিবাহিতা স্ত্রীকে স্বামী রক্ষা করবে, আর বৃদ্ধাবস্থায় পুত্রেরা রক্ষা করবে; কোন অবস্থাতেই স্ত্রীলােককে অরক্ষিত স্বাতন্ত্র্য অবস্থায় রাখবে না।” 👨‍👩‍👧‍👦

২️⃣ গৃহে গর্ভবতী নারীকে আগে খাবার দিতে হবে: 🤰🍎

সুবাসিনীঃ কুমারাংশ্চ রােগিণাে গর্ভিণীস্তথা। অতিথিভ্যোঽগ্র এবৈতান্ ভােজয়েদবিচারয়ন।। (মনুসংহিতা: ৩.১১৪)

“নববিবাহিতা বধূ, পুত্রবধূ ও কন্যা, বালক, রােগী এবং গর্ভবতী নারী এদের অতিথি ভােজনের আগেই কোনরকম বিচার না করেই ভােজন করাবে। বিলম্ব হলে তাদের পুষ্টির ব্যাঘাত ঘটতে পারে।” 👶🍲

৩️⃣ নারী অপহরণকারীদের মৃত্যুদণ্ড: 🚨💀

পুরুষাণাং কুলীনানাং নারীণাঞ্চ বিশেষতঃ। মুখ্যানাঞ্চৈব রত্নানাং হরণে বধমর্হতি।। (মনুসংহিতা:৮.৩২৩)

“পুরুষ কিংবা রূপ, গুণ ও সৌভাগ্যসম্পন্না নারী এবং হীরা, বৈদূর্য প্রভৃতি উৎকৃষ্টজাতীয় রত্ন অপহরণ করলে বধদণ্ড হবে।” 💎⚖️

৪️⃣ পরিবারে পুত্র এবং কন্যার অধিকার সমান: 👦👧

যথৈবাত্মা তথা পুত্রঃ পুত্রেণ দুহিতা সমা। তস্যামাত্মনি তিষ্ঠন্ত্যাং কথমন্যো ধনং হরেৎ।। (মনুসংহিতা:৯.১৩০)

“কোন ব্যক্তি নিজেও যেমন পুত্রও সেইরকম, অর্থাৎ আত্মা ও পুত্রতে কোন প্রভেদ নেই। আবার দুহিতা বা কন্যার পুত্রেরই সমান অধিকার।” 👨‍👩‍👧‍👦💰

৫️⃣ পতি-পত্নীর সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য এবং আমৃত্যু: 💑🔒

অন্যোন্যস্যাব্যভিচারাে ভবেদামরণান্তিকঃ। এষ ধর্মঃ সমাসেন জ্ঞেয়ঃ স্ত্রীপুংসয়ােঃ পরঃ।। (মনুসংহিতা:৯.১০১-২)

“স্ত্রী এবং পুরুষ বিবাহ-সংস্কারে আবদ্ধ হয়ে সকল সময় এমন কাজ করতে থাকবে, যাতে তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন না হয়।” 💖💍

৬️⃣ ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড : 🚫🔪

পরদারাভিমর্ষেষু প্রবৃত্তান্ নৃন্ মহীপতিঃ। উদ্বেজনকরৈর্দণ্ডৈশ্চিহ্নয়িত্বা প্রবাসয়েৎ।। (মনুসংহিতা:৮.৩৫২)

“যারা পরস্ত্রী নারীদের জোরপূর্বক যৌন মিলনের প্রচেষ্টা করে ব্যভিচারে রত হয়, রাজা তাদের নাক-কান ছেদন করে শাস্তি দিবেন; যাতে কেউ আর সাহস না করে।” 🚨

৭️⃣ নারী পূজ্যা, সমাদরনীয়া ও বংশের শ্রীবৃদ্ধির কারণ: 💐🏡

যত্র নার্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ। যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ।। (মনুসংহিতা:৩.৫৫-৫৯)

“যে বংশে নারীরা বস্ত্রালঙ্করাদি দ্বারা পূজা বা সমাদর প্রাপ্ত হন, সেখানে দেবগণ প্রসন্ন হয়ে থাকেন।” 🙏✨

৮️⃣ স্বামী-স্ত্রীর কেউ ব্যভিচার করতে পারবে না: ❌❤️‍🔥

পতিং যা নাতিচরতি মনােবাগদেহসংযতা। সা ভর্তৃলােকানাপ্লোতি সম্ভিঃ সাধ্বীতি চোচ্যতে।। (মনুসংহিতা:৯.২৯-৩০)

“যে স্ত্রী স্বামীর প্রতি ব্যভিচারিণী হয়, সে জন্মান্তরে শৃগাল-যােনিতে জন্মগ্রহণ করে।” 🐺

৯️⃣ মাতা, স্ত্রী ও কন্যার নামে মিথ্যা দোষারোপ: 🗣️🚫

মাতরং পিতরং জায়াং ভ্রাতরং তনয়ং গুরুম্। আক্ষারয়ন্ শতং দাপ্যঃ পন্থানং চাদদদ্ গুরােঃ।। (মনুসংহিতা:৮.২৭৫)

“মাতা, পিতা, স্ত্রী, ভ্রাতা, পুত্র এবং গুরু এঁদের সম্বন্ধে মিথ্যা দোষারোপ করলে একশ পণ দণ্ডে দণ্ডিত হবে।” ⚖️

🔟 মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানকে পরিত্যাগ দণ্ডনীয় অপরাধ: 👨‍👩‍👧‍👦🚨

ন মাতা ন পিতা ন স্ত্রী ন পুত্রস্ত্যাগমর্হতি। ত্যজন্নপতিতানেতান্ রাজ্ঞা দণ্ড্যঃ শতানি ষট্।। (মনুসংহিতা:৮.৩৮৯)

“মা, বাবা, স্ত্রী বা সন্তানকে পরিত্যাগ করা দণ্ডনীয় অপরাধ। রাজা কর্তৃক তাদের ছয়শ পণ দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।” 💰

১১️⃣ রাস্তায় নারীকে আগে পথ ছেড়ে দিতে হবে: 🚶‍♀️➡️🚶‍♂️

চক্রিণাে দশমীস্থস্য রােগিণাে ভারিণঃ স্ত্রিয়াঃ। স্নাতকস্য চ রাজ্শ্চ পন্থা দেয়ো বরস্য চ।। (মনুসংহিতা:২.১৩৮)

“রথে আরোহী, বয়স্ক, অসুস্থ, ভারী জিনিস বহনকারী, নারী, স্নাতক এবং রাজা ও বর এদের জন্য রাস্তায় পথ ছেড়ে দিতে হবে।” 🙏

১২️⃣ নারী-শিশু সৌভাগ্য, গৃহের দীপ্তি: 💖🏡✨

প্রজনার্থং মহাভাগাঃ পূজার্হা গৃহদীপ্তয়ঃ। স্ত্রীয়ঃ শ্রিয়শ্চ গেহেষু ন বিশেষাে'স্তি কশ্চন।। (মনুসংহিতা:৯.২৬-২৮)

“নারীরা সৌভাগ্য, গৃহের দীপ্তি এবং পূজার্হা। গৃহের শ্রী ও নারীর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।” 💎

১৩️⃣ নারী-শিশু হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ড: 👶🚫🔪

কূটশাসনকর্তৃংশ্চ প্রকৃতীনাঞ্চ দূষকান্। স্ত্রীবালব্রাহ্মণঘ্নাংশ্চ হন্যাদ্দ্বিটসেবিনস্তথা।। (মনুসংহিতা: ৯.২৩২)

“যারা দুষ্ট শাসনকর্তা, প্রকৃতিদের দূষণকারী, নারী, শিশু ও ব্রাহ্মণ হত্যাকারী এবং শত্রুদের সেবক তাদের মৃত্যুদণ্ড হবে।” 🚨

১৪️⃣ গুণহীন অযোগ্য পাত্রের হাতে কন্যাকে সমর্পণ করবে না: ❌👰

উৎকৃষ্টায়াভিরূপায় বরায় সদৃশায় চ। অপ্রাপ্তামপি তাং তস্মৈ কন্যাং দদ্যাদ্ যথাবিধি।। (মনুসংহিতা:৯.৮৮-৮৯)

“উৎকৃষ্ট গুণসম্পন্ন, যোগ্য ও উপযুক্ত বরের হাতে অপ্রাপ্তবয়স্ক কন্যাকেও নিয়ম অনুযায়ী সমর্পণ করবে।” 💍

১৫️⃣ কন্যা নিজে যোগ্য পাত্র বেছে নিতে পারবে: 👩‍❤️‍👨💖

ত্রীণি বর্ষাণ্যুদীক্ষেত কুমার্যৃতুমতী সতী। ঊর্দ্ধন্তু কালাদেতস্মাদ্বিন্দেত সদৃশং পতিম্।। (মনুসংহিতা:৯.৯০-৯১)

“ঋতুমতী কন্যা তিন বছর অপেক্ষা করবে, এরপর সেই সময়ের পর সে নিজে যোগ্য স্বামী বেছে নিতে পারবে।” ⏳

মনুসংহিতার প্রসঙ্গে আমাদের অনেকের মধ্যে আজও নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। 😔 এটি একটি আইন, শাসন এবং দণ্ডবিধির গ্রন্থ। ⚖️ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কেউ এর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালালে তা সংস্কৃতির জন্য ক্ষতিকর। ⚠️

✍️ লেখক: RANJIT BARMON ✨

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
3/related/default